ডেঙ্গু জ্বর নিরাময়ে প্রয়োজনীয় টিপস ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা
ডেঙ্গু জ্বরের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গুলো জেনে নিতে পারলে আপনি তা সহজেই ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ডেঙ্গু জ্বর পজেটিভ হলে আমাদের শরীরে রক্তের মধ্যে থাকা প্লাটেলেট স্বাভাবিকের থেকে কমে যায় যেটা অন্যান্য সাধারণত জ্বরে হয় না।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা সম্পর্কিত তথ্য জানা থাকলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জানাটা আমাদের জরুরী।আজকের এই আর্টিকেলে আমি ডেঙ্গু জ্বরের সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সুচিপত্রঃ ডেঙ্গুজ্বর নিরাময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কিত
- ডেঙ্গু জ্বর কি
- ডেঙ্গু জ্বরের চিহ্ন ও লক্ষন
- ডেঙ্গু জ্বর কেন হয়
- ডেনো জ্বর কোন সময় বেশি দেখা দেয়
- ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- ডেঙ্গু জ্বরের সচেনতা বৃদ্ধি
- ডেঙ্গু জ্বরের কিছু ও ওষুধের নাম
- ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় কি
- পরিশেষে
ডেঙ্গু জ্বর কি
প্রথমেই আমরা ডেঙ্গু সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেই। ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাল
সংক্রমণ রোগ যা মশা থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত
বেশিরভাগ মানুষেরই কোন লক্ষণ থাকে না।তবে যাদের হয় তাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে
সাধারণ লক্ষণ গুলো হল উচ্চ জ্বর,মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং
ফুসকুড়ি।
বেশিরভাগ ১-২ সপ্তাহের মধ্যে সেরে উঠবেন।কিছু লোকে তীব্র ডেঙ্গু হয় এবং তাদের
হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু মারাত্মক হতে
পারে।বিশেষ করে দিনের বেলায় মশার কামড় এড়িয়ে ডেঙ্গুর ঝুঁকি কমাতে
পারেন।বর্তমানে কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় ব্যাথা নাশক ওষুধ দিয়ে
ডেঙ্গুর চিকিৎসা করা হয়।
ডেঙ্গু হলো চারটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ডেঙ্গু ভাইরাসের (DENV1,DENV2,
DENV3,DENV4) যেকোনো একটি দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। ডেঙ্গুও হেমোরেজিক ফিভার
(DHF) হল ডেঙ্গু সংক্রমনে আরো গুরুতর রূপ।
ডেঙ্গু জ্বরের চিহ্ন ও লক্ষন
আমাদের দেশে ডেঙ্গু জ্বর কোন এক বিশেষ সময় হয়ে থাকে যেটা অনেক ক্ষেত্রে
মারাত্মক আকার ধারণ করে। আসুন আমরা ডেঙ্গু জ্বরের কিছু চিহ্ন সম্পর্কে জেনে
নেই।
- হঠাৎ করে প্রচন্ড জ্বর শুরু হওয়া
- প্রচন্ড সামনের দিকে মাথাব্যথা হতে পারে
- চোখের পিছনে ব্যাথা যা চোখ নড়াচড়া করলে আর আরো খারাপ হয়
- রুচি এবং ক্ষুধা রাস
- বমি ভাব এবং বমি হতে পারে
- বুক এবং অপরের অঙ্গে হামের মত ফুসকুড়ি হতে পারে
- বেশি এবং জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে
ডেঙ্গু জ্বরের চিহ্নর পাশাপাশি আমরা কে লক্ষণও জানার দরকার রয়েছে যা আমাদের জেনে
রাখা অত্যন্ত জরুরি
- রক্তসহ বা রক্তছাড়া ঘন ঘন বমি হওয়া
- নাক মুখ এবং মাড়ি থেকে রক্তপাত এবং ত্বকে ফুস্কুরি
- ঘুম এবং অস্থিরতা হতে পারে
- এবং মুখ সুস্থ হয়ে যাওয়া হতে পারে
- দ্রুত নাড়ি দুর্বল হতে পারে
- শ্বাসকষ্ট হতে পারে
ডেঙ্গু জ্বর কেন হয়
ডেঙ্গু জ্বর কেন হয় তা আমাদের সবাইকে জানা দরকার রয়েছে। কারণ ডেঙ্গু জ্বর
থেকে বাঁচতে গেলে আমাদেরকে এসব উৎপত্তি বা কি থেকে হয় এগুলো জানা ভালোভাবে
দরকার রয়েছে।তাহলে না আমরা ভবিষ্যতে বা আগামীতে যেন সাবধানতা অবলম্বন করতে
পারবো।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসের কারণে হয় যা মূলত এডিস এজিপ্তাই প্রজাতির স্ত্রী
মশার কামড়ে মাধ্যমে সংক্রমিত হয় । চারটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ভাইরাস
রয়েছে যাকে ডেঙ্গু সেরা টাইপ বলা হয়। ডেঙ্গু হলো বিশ্বের সবচেয়ে
ব্যাপকভাবে বিতরণ করা মশাবাহিত ভাইরাল রোগ। জলবায়ু পরিবর্তন,দ্রুত নগরায়ন
এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রাদুর্ভাব সাধারনত
মৌসুমী হয়, বর্ষাকালে এবং পরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
ডেনো জ্বর কোন সময় বেশি দেখা দেয়
ডেঙ্গু জ্বর মোকাবেলায় আমাদের অনেক কিছু
জানার দরকার রয়েছে তার মধ্যে কোন সময় বেশি হয় এটা আমাদের জেনে নিতে পারা যায়
তাহলে অনেকটাই পরিস্থিতির মোকাবেলা করা যায়।আসুন আমরা জেনে নেই কোন সময় বেশি
ডেঙ্গু জ্বরের বেশি সংক্রমিত হয়। ডেঙ্গু একটি সংক্রমিত রোগ যা এডিস মশার
মাধ্যমে ছড়ায়। আর এই মশা বর্ষাকালে বেশি প্রকাশ পায়।
বর্ষাকালে যদি আমরা অনেক কিছু সাবধানতা অবলম্বন করি যেমন আমরা আমাদের নিজ
বাসা যেখানে পানি জমে থাকে সে সব জায়গায় গুলো চিহ্নিত করে ফেলে দিতে পারি জানো
এডিস মশা বংশবিস্তার না করতে পারে। বাড়ি আশেপাশে ঘাস আবর্জনা সব কিছু পরিষ্কার
করে রাখতে হবে। ফ্রিজের পানি জমে যেন আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের জন্য মশার সংখ্যা হ্রাস করা এবং মশার কামড়ের সংস্পর্শে
কমানো প্রয়োজন। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য এখানে কিছু কার্যকর কৌশল রয়েছে যেগুলো
আপনি প্রয়োগ করতে পারেন।
- মশা নিরোধক ব্যবহার করা
- প্রজনন স্থান অপসারণ করা
- প্রতিরক্ষামূলক পোশাক করা
- স্ক্রিন এবং জাল ইন্সটল করুন মশার ফাঁদ এবং কীটনাশক ব্যবহার করা
- সামাজিক প্রচেষ্টা
- নিজ বাড়ির ভিতর ও বাইরে ও ছাদের উপর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
- সচেতনতা প্রচার করা
- চিকিৎসার পরামর্শ নিন
- জনস্বাস্থ্য উদ্যোগকে সমর্থন করা
আরও পড়ুনঃ বাড়ির ভেতরে যেসব জায়গায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে
ডেঙ্গু জ্বরে সচেনতা বৃদ্ধি
ডেঙ্গু জ্বর সচেতনতা সম্পর্কিত একটি সুপরিকল্পিত বক্তৃতা জনসাধারণের বোধগম্য এবং
আচরণকে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের সচেতনতা বৃদ্ধির মূল
বিষয় গুলি নিম্নরূপঃ
- ডেঙ্গু কিভাবে সংক্রমিত হয় এবং জয়েন্ট এর লক্ষণ গুলি সম্পর্কে ব্যাখ্যা
- মশার প্রজনন স্থান নির্মূল করার গুরুত্বের উপর জোর
- মশার কামোর প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা
- ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা এবং সরকারি উদ্যোগের ভূমিকা
- ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণের জন্য ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান
ডেঙ্গু জ্বর ও অন্যান্য জ্বরের কিছু তথ্য ও তালিকা
ডেঙ্গু জ্বরের পাশাপাশি আমরা অন্যান্য জ্বরের তথ্যগুলো গুলো জেনে আসি। তাহলে
আমাদের ডেঙ্গু জ্বর অথবা অন্যান্য সম্পর্কে অনেকটা বিস্তারিত
জানা হয়ে যাবে।
রোগ | মশার ভেক্টর | ইউনিক লক্ষন |
---|---|---|
ডেঙ্গু জ্বর | এডিস এজিপটাই | উচ্চ জ্বর,তীব্র জয়েন্ট ও বেশি ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা,ফুসকুড়ি। |
ম্যালেরিয়া | এনাফিলিশ | চক্রীয় জ্বর, ঠান্ডা লাগা, ঘাম, রক্তস্বল্পতা,জন্ডিস। |
চিকনগুনিয়া | এডিস এজিপটাই | গুরুতর জয়েন্টে ব্যথা, জ্বর, ফুসকুড়ি ও মাথা ব্যথা। |
আরও পড়ুন ঃ চিকনগুনিয়া জ্বর সম্পর্কে জানুন
ডেঙ্গু জ্বরের কিছু ও ওষুধের নাম
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা মেডিসিন নেই। ডেঙ্গু জ্বর
থেকে সেরে ওঠার সময় প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন।
যদি আপনার পানি শূন্যতা নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলি মধ্যে কোনটি থাকে এবং লক্ষণ গুলি
দেখা দেয় তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন
- হঠাৎ প্রস্রাব হতে হতে কমে যাওয়া
- ঠোঁট ও মুখ শুষ্ক হওয়া
- অলসতা বা বিভ্রান্তি হওয়া
- ঠান্ডা বা আঠালো হাত হওয়া
ওভার দা কাউন্টার (OTC) শুধু এসিটামিনোফ্যান বেশি ব্যথা এবং জ্বর কমাতে সাহায্য
করে। কিন্তু যদি আপনার ডেঙ্গু জ্বর হয় তাহলে আপনার অন্যান্য ওটিসি
ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত, যেমন এসপিরিন আইবুপ্রোফেন এবং নেপ্রক্সেন
সোডিয়াম।এসব ব্যথা নাশক সবগুলি ডেঙ্গু জ্বরের রক্তপাতা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে
পারে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় কি
বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বর একটি একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।আমরা জানি প্রতিকারের
চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় বেশি শ্রেয়। আমরা ব্লাডের সিবিসি টেস্টের
মাধ্যমে ডেঙ্গু পজেটিভ না নেগেটিভ তা জানতে পারি। আমরা ব্লাডের সিবিসি
টেস্ট এর মাধ্যমে নেগেটিভ তা নিশ্চিত হতে পারি। ব্লাডে (CBC) টেস্টে যদি
রক্তের প্লাটিলেট স্বাভাবিকের থেকে কম হয় তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে
ডেঙ্গু পজেটিভ হয়েছে।
বাংলাদেশে সারা বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ( ৪০০-৫০০ ) লোক মারা
যায়।ডেঙ্গু জ্বর হলে ভয় না পেয়ে বা কোন প্রকার বিভ্রান্তিতে না পড়ে আমরা
প্রয়োজনীয় কিছু জ্বরের ওষুধ ও ব্যাথা নাশক ওষুধ খেয়ে এর মোকাবেলা করতে
পারি।
আরও পড়ুন ঃ রক্তের সিবিসি টেস্টের প্লাটেলেট সম্পর্কে জানুন
লেখকের শেষ কথাঃ ডেঙ্গু জর নিরাময়ে অবহেলা দূর করুন
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর একটি বড় স্বাস্থ্য চ্যলেঞ্জ হিসেবে দাড়িয়ে গেছে।বিশেষ করে
বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী ঋতুতে।এ মশা বাহিত রোগের প্রকোপ কমাতে সচেতনতা এবং
প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে বর্ণিত প্রতিরোধের,সচেনতার
কৌশল অনুসরণ করে এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য ও পরামর্শ সম্পর্কে অবগত থাকার মাধ্যমে
ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়গুলোকে যেন রক্ষা করতে পারি।
আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে ডেঙ্গু জর নিরাময়ের প্রয়োজনীয় ও প্রতিরোধ
ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনি জানতে পেরেছেন।এই রকম আরও স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য পেতে
আমদের সঙ্গে থাকুন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
lifechange24 এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url