ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার কৌশল ও টিপস
অল্প বয়সে আমাদের ত্বকে তারুণ্য চলে যায় বা বয়সের ছাপ পড়ে যায় এবং সেটি দূর করা যায় সেটা আমরা অনেকেই জানিনা। অল্প বয়সে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে গেলে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আত্মবিশ্বাস কমে যায় যা আমাদের কাম্য নয়।
কি কারনে আমাদের অল্প বয়সে বয়সে ছাপ পড়ে যায় সেটা যদি জেনে নিই তাহলে খুব সহজে অনেকাংশে আমরা সমস্যাটা দূর করতে পারবো।আজকের এই আর্টিকেলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ অল্প বয়সে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখা সম্পর্কিত
- অল্প বয়সে ত্বকে তারুণ্য চলে যাবার কারণ
- ঘরোয়া উপায়ে তারুণ্য ধরে রাখার কার্যকরী উপায়
- তারুণ্য ধরে রাখতে দৈনন্দিন খাবারের তালিকা
- তারুণ্য ধরে রাখতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা
- বিশেষ করে ছেলেদের তারুণ্য ধরে রাখার কৌশল
- বয়সের ছাপ দূর করতে ক্রিম এর ব্যবহার
- অল্প বয়সেই বয়সের ছাপ যেন না পড়ে সতর্কতা অবলম্বন
- অল্প বয়সে বয়সে ছাপ পড়ার প্রতি গুরুত্ব
- তারুণ্য ফিরে পেতে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ
- লেখকের বক্তব্য
অল্প বয়সে ত্বকে তারুণ্য চলে যাবার কারণ
আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকের তারুণ্য চলে যায়। সাধারণত 30 বছর বয়সের পর থেকে আমাদের এই টকের জন্য চলে যাওয়াটা পরিলক্ষিত হয়। আমরা যদি একটু খেয়াল করি তাহলে এই তারুণ্য আমরা বিভিন্ন উপায়ে ধরে রাখতে পারি। তবে তারুণ্য থাকলে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও মন প্রফুল্ল থাকে। কি কি কারণে আমাদের ত্বকের তারুণ্য চলে যায় তার কারণ গুলো যদি আমরা বিস্তারিত জেনে নিতে পারি তাহলে আমরা যত্নবান হতে পারব।
প্রথমেই আমরা জেনে নেই কোলাজেন( COLLAGEN) সম্পর্কে। এই কোলাজেন আমাদের ত্বকে বিদ্যমান থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই কোলাজেন কমতে থাকে। এখন আমরা এই কোলাজেন সম্পর্কে একটু জেনে নেই। কোলাজেন হলো এক প্রকার প্রোটিন যা আমাদের ত্বক গঠনে সহায়তা করে।কোলাজেন উৎপাদন কমে গেলে ত্বক রুক্ষ, বলিরেখা, ঝুলে পড়া, বলি রেখা ও ত্বক ক্যান্সার ইত্যাদি দেখা দেয়।
এছাড়া আল্ট্রা ভায়োলেট(UV) রশ্মি ত্বকের তারুণ্য চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এই আল্টা ভায়োলেট রশ্মি আমাদের দেহের জিনে ক্ষতি করে।
আমাদের ত্বকের কার্যকারিতা বাধা রক্ষা করতে এবং ত্বকের ক্ষতি রোধ করতে এন্টি এজিং রুটিনে কিছু উৎপাদনের সংমিশ্রণ থাকা দরকার রয়েছে। যেমন ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই এর মত আলফা হাইড্রোক্সি এসিড(AHAs) এবং ভিটামিন এ এর একটি ডেরিভেটিভ রেটিনল।এই এজেন্ট গুলো অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা ত্বক পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল করার জন্য ত্বকের কোষের পুনরুত্থানকে উৎসাহিত করে। এই এজেন্ট গুলো ত্বকের পুরুত্ব, স্থিতিস্থাপকতা এবং স্বাস্থ্য বৃদ্ধির জন্য কোলাজেন এবং ইলাস্টিন উৎপাদনকে উজ্জীবিত করে।
ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই এর মত আলফা হাইড্রোক্সি এসিড(AHAs) এবং ভিটামিন এ এই এজেন্ট গুলো প্রাকৃতিক বার্ধক্য প্রক্রিয়ায় পাশাপাশি সূর্যের ক্ষতি এবং দূষণের মতো বাহ্যিক চাপের কারণে সৃষ্ট সূক্ষ্ম রেখা, বলিরেখা, শিথিল ত্বক, কালো দাগ এবং বয়সের দাগ থেকে রক্ষা করে কার্যকর অ্যান্টি এজিং অর্থাৎ তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ঘরোয়া উপায়ে তারুণ্য ধরে রাখার কার্যকরী উপায়
আমাদের ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য কিছু ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারি। এতক্ষণ আমরা জেনে গেছি তারুণ্য অল্প বয়সে কেন চলে যাই। তাই এই ভুলগুলো সংশোধন করে আমরা কিছু কৌশল অবলম্বন করে এ সমস্যার সমাধান করতে পারি।
- দিনে ৩-৪ বার পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা
- সারাদিন ঘন ঘন পানি খাওয়া কারণ টিস্যু গুলোর পানির দরকার রয়েছে
- রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া অর্থাৎ পর্যাপ্ত ঘুম দরকার রয়েছে
- আমরা প্রয়োজনের টক দই মুখে একবার দিনে মারতে পারি পাঁচ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে
- দিনে একবার শশা মিশ্রণ থাকতে পারি
তারুণ্য ধরে রাখতে দৈনন্দিন খাবার তালিকা
তারুণ্য ধরে রাখতে ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-ই এর মত আলফা হাইড্রোক্সি এসিড(AHAs) এবং ভিটামিন-এ এই সব ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তাই আমাদের যে সমস্ত খাবারে এ ভিটামিন গুলো পাওয়া যায় সে সমস্ত খাবারে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। এখন জানা দরকার কি কি খাবারে এই ভিটামিন গুলো বিদ্যমান রয়েছেঃ
- পালং শাক দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখুন
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার বা সরাসরি খেতে পারেন।
- গ্রিন টি দিনে1 থেকে দুইবার পান করুন
- বাদাম
- লেবু কমলা
- মধু
- মিষ্টি আলু
- জলপাই তেল
- কালোজিরা তেল
তারুণ্য ধরে রাখতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা
ইতিপূর্বেই আমরা জেনে গিয়েছি যে কিভাবে ত্বকের তারুণ্য কমে যায়। তাই বয়স বাড়ার আগেই অর্থাৎ ৩০ বছর হয়ে গেলেই আমাদের এই সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিলে অনেকটা আমরা রক্ষা পেতে পারি। প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমাদেরকে তারুণ্য ধরে রাখার কারণগুলো ভালোভাবে জেনে নিয়ে পালন করতে হবে।
যেমন ঘন ঘন পানি খাওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন খাবারের খাদ্য তালিকায় যদি আমি ভিটামিন সি, এ, আলফা-৩ ফ্যাটি এসিড খাবারগুলো যেমন লেবু,কমলা, ওমেগা-৩ সরাসরি খেয়ে থাকি তাহলে অনেকাংশেই আমরা তারুণ্য ধরে রাখতে পারব।
বিশেষ করে ছেলেদের তার অন্য ধরে রাখার কৌশল
মেয়েদের পাশাপাশি পুরুষেরাও তারুণ্য ধরে রাখতে পারেন। উপরের বর্ণিত কারণ গুলো জেনে ছেলেরাও অনুসরণ করে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ ছেলেরাও বেশিরভাগ বাইরে সময় কাটান এবং সূর্য বা রোদ্রের মধ্যে থাকতে হয়। তাই বিশেষ করে ছেলেদেরই ত্বক ভালো রাখার দেওয়া প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বর্তমান যান্ত্রিক যুগে ছিল অনেকেরই সময় হয় না ত্বকের যত্ন নেওয়ার।ছেলেরা আলফা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সরাসরি খেতে পারেন যা বাজারে ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায়। এই আলফা-৩ ফ্যাটি এসিড এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এ সি রয়েছে যা ত্বককে ভালো রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
আরও পড়ুন ঃ তারুণ্য ধরে রাখতে ভিটামিন-ই সম্পর্কে জানুন
বয়সের ছাপ দূর করতে ক্রিম এর ব্যবহার
তারুণ্য ধরে রাখতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমাদের মনযোগী হওয়া উচিত। এর পরেও যদি কেউ মনে করেন আমি কিছু ক্যামিকাল ক্রিম ব্যবহার করব তা করতে পারেন। তবে প্রাকৃতিক নিয়মে যদি রেজাল্ট পাওয়া যাই তাহলে প্রাকৃতিক নিয়মকে প্রাধান্য দেয়া আমাদের উচিত হবে।কারন প্রাকৃতিক নিয়মে এগিয়ে গেলে ত্বকের বা স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হয় না।
বাজারে অনেক ধরনের ক্রিম পাওয়া যাই তার মধ্যে থেকে ভাল মানের ক্রিম কিনতে পারেন।অবশ্যই ক্রিম মাখার পদ্ধতি ভাল ভাবে পড়ে নিবেন।তা না হলে ক্ষতি হতে পারে।
অল্প বয়সেই বয়সের ছাপ যেন না পড়ে সতর্কতা অবলম্বন
আমরা জানি ৩০ বছর বয়স পার হলেই অনেক সময় আমাদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে হয় যেমন চোখে ঝাপসা দেখা, ত্বকে তারুণ্য না থাকা ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো অনুধাবন করে আমাদেরকে যদি সতর্ক থাকি তাহলে অনেকাংশে বয়সের ছাপ দূর করা সম্ভব হবে। দৈনন্দিন খাবারে যদি আমরা মনোযোগী হয় অল্প অল্প একটা একটা করে অভ্যাস গড়ি তাহলে কিন্তু এই সমস্যা থেকে মোকাবিলা করা আমাদের সম্ভব পর হবে।
এই অভ্যাসগুলো যদি গড়ে তুলি এবং বহাল রাখি তাহলে দেখা যাবে ৪৫ বা ৫০ বা ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত তার তারুণ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে। এজন্য আমাদের পরিকল্পনা করে সতর্ক থাকা প্রয়োজন রয়েছে।
অল্প বয়সে বয়সের ছাপ পড়ার প্রতি গুরুত্ব
বর্তমান সময়ে অল্প বয়সে বয়সে ছাপ পড়ে যাওয়ার প্রতি আমাদের গুরুত্ব অবশ্যই দিতে হবে। যদি কেউ কোথাও আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজকর্ম করতে চাই সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ত্বকের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া দরকার রয়েছে।সাধারণত ৩০ বছর বয়সে অনেকেই ক্যারিয়ার বা চাকরি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন যার কারণে ত্বকের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না।
কিন্তু যখন বুঝতে পারেন তখন আর সাংসারিক কাজ এরপরে আর যত্ন নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই আগে থেকেই যদি এর গুরুত্ব ও মর্ম বোঝা থাকে বা অভ্যাস গড়ে থাকে তাহলে সারা জীবন এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে অনেকাংশে তার অন্য ধরে রাখা যায়।
আরও পড়ুন ঃ তারুণ্য ধরে রাখতে ঘুমের সঠিক সময় সম্পর্কে জানুন
তারুণ্য ফিরে পেতে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ
আপনারা যারা ঘরোয়া পদ্ধতি গ্রহণ করতে চান না তারা সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। এখন প্রশ্ন হলো কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন। আপনারা স্কিন ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে পারেন। স্কিন ডাক্তারগণ সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ক্রিম এবং দৈনন্দিন খাবারের ওপরেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
মানুষের ত্বকে তার অন্য ধরে রাখতে যে বিষয়টি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে সেটা হল ঘন ঘন পানি পান করা, মুখ ধোয়া এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করা। একজন ব্যক্তি যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে নিয়মিত ব্যায়াম বা হাটা পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি স্বাস্থ্য সচেতনতা অবলম্বন করে তাহলে অধিকাংশেই এই সমস্যাটা দূর হয়ে যায়।
আরও পড়ুন ঃ শরীরে ক্ষতি করে এমন খাবারের সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত
লেখকের বক্তব্যঃ তকে ও মুখে তারুণ্য ধরে রাখুন
আমার মতে, বর্তমান ডিজিটাল সময়ে তারুণ্য ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ বর্তমান সময়ের আবহাওয়া এত খারাপ চলছে যা আমাদের স্কিনকে অনেকটা ড্যামেজ করে ফেলছে যেমন ধোয়া, ধুলাবালি কনা, খাবারে ভেজাল, কেমিক্যালযুক্ত খাবার,ক্ষতিকর কার্বোহাইডেট খাবার খাওয়া ইত্যাদি।
সর্বোপরি আমাদের প্রাকৃতিক খাবারের প্রতি মনযোগী হয়ে ভ্যাজালযুক্ত ও ক্যামিকেলযুক্ত খাবার বন্ধ করে নিজ সাস্থের প্রতি যত্নবান হতে হবে।তাহলে আমাদের শুধু ত্বক কেন স্বাস্থ্য শরীর মন সবই ভাল থাকবে।
lifechange24 এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url